ঢাকা ০৪:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রামেক হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সেই নবজাতককে দত্তক নিতে অনেক আবেদন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাবা-মা পরিচয় দিয়ে দু’জন নারী-পুরুষ শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কথা বলে সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া নবজাতককে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রামেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে (শিশু বিভাগে) ভর্তি করেন। ভর্তির ঘন্টাখানেক পর ফুটফুটে শিশুটিকে ওয়ার্ডের বেডে রেখে লাপাত্তা হয়ে যান তার বাবা-মা। এ ঘটনায় শুধু হাসপাতালেই নয়, সমস্ত রাজশাহীজুড়েই ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন। সেই শিশুটির অবস্থান এখন রাজশাহী সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছোটমনি নিবাসে। শিশুটিকে ছোটমনি নিবাস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পর হঠাৎ করে তার শারীরিক কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। তাই তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে আবারো ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ এর নির্দেশনায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটির ‘অসম্পূর্ণ মলদ্বার’ স্থানটি অপারেশন করেন ডাক্তাররা। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও শির্ণ দেহ দেখে বোঝায় যায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভুমিষ্ট হয়েছে শিশু বাচ্চাটি। নবজাতকটির নাম রাখা হয়েছে রামেক হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জামিলুর রহমানের নামে। কারণ হিসেবে, ছোটমণি নিবাসের কর্মকর্তারা জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নবজাতকটির মলদ্বারে সমস্যা দেখা দেওয়াতে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তার জামিলুর রহমানের হাত দিয়েই সফল অস্ত্রপচার সম্পন্ন হয়। তাই ডাক্তারের অনুমতি সাপেক্ষে ওই নবজাতকটির নাম রাখা হয় জামিলুর রহমান।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর জামিলুর রহমান ওরফে বাবুকে দত্তক নেবার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জেলা থেকে ছোটমনি নিবাসে বেশ কয়েকটি আবেদন পড়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো, সিরাজগঞ্জ ও রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবী, রাজশাহীর রাজপাড়া এলাকা ও মোহনপুর উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আবেদন এসেছে বলে জানান সমাজসেবা অধিদপ্তরাধীন ছোটমণি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রেকসোনা খাতুন।

আবেদনগুলো ছাড়াও প্রতিদিন অনেকেই ফোন করে শিশু বাচ্চাটিকে দত্তক নেবার জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিজ্ঞ পারিবারিক আদালত আবেদন যাচাই বাছাই পূর্বক যাকে যথার্থ মনে করবেন আইনের মাধ্যমে ঐ পরিবারের কাছে নবজাতক জামিলুর রহমানকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান সেখানে কর্মরত সহকারি তত্ত্বাবধায়ক (সংযুক্তি) এখলাসুর রহমান।

বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ছোটমনি নিবাস ও রামেকের ২৬নং ওয়ার্ডে (শিশু ওয়ার্ড) কর্মরতদের অনেকেই বলেন, মা-বাবা থেকেও কাগজে কলমে আজ এতিম এই নবজাতকটি। এই ধরনের অমানবিক কাজ মানুষ কেনো করেন সেটিই এখন ভাবনার বিষয়। ছোটমনি নিবাসে কর্মরত একজন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে জানান, দুই বছর আট মাস আগে রংপুর শহরের একটি ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করে এখানে আনা হয়েছিল আরো একটি শিশু বাচ্চাকে। তার নাম রাখা হয়েছে রাইসা খাতুন। এমন ধরনের অমানবিক কাজ নিয়ে অনেকটাই বিব্রত সেখানে কর্মরতরা। ছোটমণি নিবাসে মোট ১৪ জন শিশুবাচ্চা আছে। এরমধ্যে মেয়ে সাতজন ও ছেলে রয়েছে সাতজন। এছাড়াও এখানে আছে মোট তিনজন প্রতিবন্ধী শিশু। দুজন শারীরিক ও একজন দৃষ্টিশক্তিহীন। ছোটমনি নিবাসের কর্মকর্তারা জানান, এখানে সাত বছর পর্যন্ত এতিম বাচ্চাদেরকে রাখা হয়। এরপর তাদেরকে সরকারি শিশু সদনে হস্তান্তর করা হয়। সেখানেই তারা বেড়ে ওঠে।

জানতে চাইলে সহকারি তত্ত্বাবধায়ক এখলাসুর রহমান বলেন, যে পরিবারের কাছে শিশু বাচ্চাটিকে হস্তান্তর করা হবে নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দত্তক নেয়া বাবা-মা ওই শিশু বাচ্চাটিকে স্বশরীরে হাজির করবে বিজ্ঞ আদলতের কাছে। এছাড়াও আদালত যখন চাইবেন তখনই এই বিষয়ে যাচাই বাছাই করতে পারবেন। শিশুটিকে যেনো অন্য কোথাও হস্তান্তর করা না হয় সেজন্যই এই নিয়ম। যে পরিবার শিশুটিকে দত্তক নেবে তাদের পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তাও দেন সোনামনি নিবাসে কর্মরতরা।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

রামেক হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সেই নবজাতককে দত্তক নিতে অনেক আবেদন

আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাবা-মা পরিচয় দিয়ে দু’জন নারী-পুরুষ শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কথা বলে সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া নবজাতককে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রামেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে (শিশু বিভাগে) ভর্তি করেন। ভর্তির ঘন্টাখানেক পর ফুটফুটে শিশুটিকে ওয়ার্ডের বেডে রেখে লাপাত্তা হয়ে যান তার বাবা-মা। এ ঘটনায় শুধু হাসপাতালেই নয়, সমস্ত রাজশাহীজুড়েই ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন। সেই শিশুটির অবস্থান এখন রাজশাহী সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছোটমনি নিবাসে। শিশুটিকে ছোটমনি নিবাস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পর হঠাৎ করে তার শারীরিক কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। তাই তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে আবারো ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ এর নির্দেশনায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটির ‘অসম্পূর্ণ মলদ্বার’ স্থানটি অপারেশন করেন ডাক্তাররা। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও শির্ণ দেহ দেখে বোঝায় যায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভুমিষ্ট হয়েছে শিশু বাচ্চাটি। নবজাতকটির নাম রাখা হয়েছে রামেক হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জামিলুর রহমানের নামে। কারণ হিসেবে, ছোটমণি নিবাসের কর্মকর্তারা জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নবজাতকটির মলদ্বারে সমস্যা দেখা দেওয়াতে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তার জামিলুর রহমানের হাত দিয়েই সফল অস্ত্রপচার সম্পন্ন হয়। তাই ডাক্তারের অনুমতি সাপেক্ষে ওই নবজাতকটির নাম রাখা হয় জামিলুর রহমান।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর জামিলুর রহমান ওরফে বাবুকে দত্তক নেবার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জেলা থেকে ছোটমনি নিবাসে বেশ কয়েকটি আবেদন পড়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো, সিরাজগঞ্জ ও রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবী, রাজশাহীর রাজপাড়া এলাকা ও মোহনপুর উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আবেদন এসেছে বলে জানান সমাজসেবা অধিদপ্তরাধীন ছোটমণি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রেকসোনা খাতুন।

আবেদনগুলো ছাড়াও প্রতিদিন অনেকেই ফোন করে শিশু বাচ্চাটিকে দত্তক নেবার জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিজ্ঞ পারিবারিক আদালত আবেদন যাচাই বাছাই পূর্বক যাকে যথার্থ মনে করবেন আইনের মাধ্যমে ঐ পরিবারের কাছে নবজাতক জামিলুর রহমানকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান সেখানে কর্মরত সহকারি তত্ত্বাবধায়ক (সংযুক্তি) এখলাসুর রহমান।

বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ছোটমনি নিবাস ও রামেকের ২৬নং ওয়ার্ডে (শিশু ওয়ার্ড) কর্মরতদের অনেকেই বলেন, মা-বাবা থেকেও কাগজে কলমে আজ এতিম এই নবজাতকটি। এই ধরনের অমানবিক কাজ মানুষ কেনো করেন সেটিই এখন ভাবনার বিষয়। ছোটমনি নিবাসে কর্মরত একজন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে জানান, দুই বছর আট মাস আগে রংপুর শহরের একটি ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করে এখানে আনা হয়েছিল আরো একটি শিশু বাচ্চাকে। তার নাম রাখা হয়েছে রাইসা খাতুন। এমন ধরনের অমানবিক কাজ নিয়ে অনেকটাই বিব্রত সেখানে কর্মরতরা। ছোটমণি নিবাসে মোট ১৪ জন শিশুবাচ্চা আছে। এরমধ্যে মেয়ে সাতজন ও ছেলে রয়েছে সাতজন। এছাড়াও এখানে আছে মোট তিনজন প্রতিবন্ধী শিশু। দুজন শারীরিক ও একজন দৃষ্টিশক্তিহীন। ছোটমনি নিবাসের কর্মকর্তারা জানান, এখানে সাত বছর পর্যন্ত এতিম বাচ্চাদেরকে রাখা হয়। এরপর তাদেরকে সরকারি শিশু সদনে হস্তান্তর করা হয়। সেখানেই তারা বেড়ে ওঠে।

জানতে চাইলে সহকারি তত্ত্বাবধায়ক এখলাসুর রহমান বলেন, যে পরিবারের কাছে শিশু বাচ্চাটিকে হস্তান্তর করা হবে নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দত্তক নেয়া বাবা-মা ওই শিশু বাচ্চাটিকে স্বশরীরে হাজির করবে বিজ্ঞ আদলতের কাছে। এছাড়াও আদালত যখন চাইবেন তখনই এই বিষয়ে যাচাই বাছাই করতে পারবেন। শিশুটিকে যেনো অন্য কোথাও হস্তান্তর করা না হয় সেজন্যই এই নিয়ম। যে পরিবার শিশুটিকে দত্তক নেবে তাদের পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তাও দেন সোনামনি নিবাসে কর্মরতরা।